فضائل الحج والعمرة وفوائدهما

فضائل الحج والعمرة وفوائدهما

Read Article
معلومات المادة باللغة الأصلية

فضائل الحج والعمرة وفوائدهما

ভাষা: بنغالي
প্রস্তুতকরণ: আলী হাসান তৈয়ব
বর্ণনা:
الحج هو الركن الخامس من أركان الاسلام، وهو من أفضل العبادات؛ لاشتماله على انفاق المال وجهاد البدن؛ ولأنه يجمع معاني العبادات كلها، فمن حج فكأنما صام وصلى واعتكف وزكى ورابط في سبيل الله وغزا؛ فعن أبي هريرة - رضي الله عنه - قال: « سئل رسول الله - صلى الله عليه وسلم - أي الأعمال أفضل؟ قال: ايمان بالله ورسوله، قيل: ثم ماذا؟ قال: الجهاد في سبيل الله، قيل: ثم ماذا؟ قال: حج مبرور ».

বিস্তারিত বিবরণ

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপকারিতা

[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

আলী হাসান তৈয়ব

সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

2012 - 1433

فضائل الحج والعمرة وفوائدهما

« باللغة البنغالية »

علي حسن طيب

مراجعة: د/ محمد منظور إلهي

2012 - 1433

হজ-উমরার ফাযাইল ও উপকারিতা

বিবিধ অনন্যতায় উদ্ভাসিত এক ইবাদাতের নাম হজ। একই সঙ্গে এটি কায়িক ও আর্থিক ইবাদাত- জীবনে একবারই যা সম্পন্ন করা ফরয। এর স্থান, সময় ও কার্যাদি সবকিছুতেই রয়েছে স্বকীয়তা। এটি কেবল সামর্থ্যবানদের ওপরই ফরয; সালাত-রোজার মতো ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য জরুরী নয়। একদিকে হজ যেমন ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, তেমনি সব ধরনের ইবাদাতের সমন্বয়ক। ফলে যিনি হজ করেন তিনি যেন রোযা রাখেন, সালাত আদায় করেন, ইতিকাফ করেন, যাকাত প্রদান করেন এবং আল্লাহর রাস্তায় রাত জাগেন ও জিহাদ করেন। আখিরাতে অনেক লাভ ছাড়াও হজ মানুষের জন্য পার্থিব অনেক কল্যাণ ও উপকারিতার বয়ে আনে। হাদীছে রাসূলের বিশাল ভাণ্ডারে হজ ও উমরার ফযীলত সম্পর্কে অনেক বাণী বিবৃত হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল :

১. হজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল :

ইসলামে অনেক আমলই রয়েছে আল্লাহকে খুশি করবার জন্য, কিন্তু সেসবের মধ্যে সেরাদের অন্যতম সেরা হলো হজ। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন্ আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন,

فَقَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُور.

’আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা’। বলা হল, ‘তারপর কী?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা’। বলা হল ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘মকবূল হজ’।’ [বুখারী : ৬২; মুসলিম : ৩৮]

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, সর্বোত্তম আমল কী- এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি বললেন,

«الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ، ثُمَّ الْجِهَادُ، ثُمَّ حَجَّةٌ بَرَّةٌ تَفْضُلُ سَائِرَ الْعَمَلِ كَمَا بَيْنَ مَطْلِعِ الشَّمْسِ إِلَى مَغْرِبِهَا. »

‘এক আল্লাহর প্রতি ঈমান; অতঃপর মাবরূর হজ, যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ; সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত (অন্যান্য আমলের সঙ্গে তার শ্রেষ্ঠত্বের ব্যবধান)’। [আহমদ : ১৯০১০]

২. পাপমুক্ত হজের প্রতিদান জান্নাত :

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একেক আমলের প্রতিদান একেক ধরনের নির্ধারণ করেছেন। কোনো আমলের প্রতিদান উট কুরবানীর মতো, কোনোটার প্রতিদান গোলাম আযাদের মতো ইত্যাদি। কিন্তু একটি কবুল হজের প্রতিদান আর কিছু নয়; সরাসরি জান্নাত। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ. »

‘আর মাবরূর হজের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।’ [বুখারী : ৩৭৭১; মুসলিম : ৯৪৩১]

৩. হজ জিহাদতুল্য :

জিহাদ হলো ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। জিহাদ মানে নিজের সবচে প্রিয় জিনিস অর্থাৎ আপন জীবনখানি আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেয়া। নারী ও অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য এই হজ হলো সেই জিহাদের মতো। বিভিন্ন হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজকে জিহাদ হিসেবে গণ্য করেছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, জিহাদকে তো আপনি সর্বোত্তম আমল হিসেবে মনে করেন, আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন,

«لَكُنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ. »

‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে মাবরূর হজ।’ [বুখারী : ৪৮৭]

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কি আপনাদের সঙ্গে জিহাদে ও অভিযানে বের হব না’? তিনি বললেন,

«لَكُنَّ أَحْسَنُ الْجِهَادِ وَأَجْمَلُهُ الْحَجُّ حَجٌّ مَبْرُورٌ. »

‘তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ’ মাবরূর হজ।’ [ফাতহুল বারী : ৪/১৮৬১]

আরেক হাদীছে বলা হয়েছে, আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«جِهَادُ الْكَبِيرِ ، وَالصَّغِيرِ ، وَالضَّعِيفِ ، وَالْمَرْأَةِ : الْحَجُّ ، وَالْعُمْرَةُ. »

‘বয়োবৃদ্ধ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, দুর্বল ও মহিলার জিহাদ হচ্ছে হজ ও উমরা।’ [নাসাঈ : ২৬২৬]

৪. হজ অতীত পাপ মোচন করে :

হজ এমন এক মহান ইবাদাত যার মাধ্যমে অতীতের যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হজ থেকে ফেরার সময় একজন হাজী সদ্যভূমিষ্ট শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ».

‘যে আল্লাহর জন্য হজ করল, যৌন সম্পর্কযুক্ত অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এলো।’ [সহীহ বুখারী : ১৫২১; মুসলিম : ১৩৫০]

এ হাদীছের অর্থ আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ থেকে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেন,

«أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ».

‘তুমি কি জান না, ‘কারো ইসলাম গ্রহণ তার পূর্বের সকল গুনাহ বিলুপ্ত করে দেয়, হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ বিলুপ্ত করে দেয় এবং হজ তার পূর্বের সকল গুনাহ বিলুপ্ত করে দেয়?’ [মুসলিম : ১২১]

৫. হজের ন্যায় উমরাও পাপ মোচন করে :

হজের সফরে আমরা কেবল হজই করার সুযোগ পাই না; বরং সবার জন্য একাধিক উমরা করারও সুযোগ ঘটে। তাছাড়া হজ কেবল নির্দিষ্ট সময়েই করা যায়। পক্ষান্তরে উমরা করা যায় সারা বছরই। তাই কেবল হজই নয়; উমরা করেও আমরা নিজেদের অতীত পাপের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হতে পারি। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَتَى هَذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ».

‘যে ব্যক্তি এই ঘরে এলো, অতঃপর যৌন সম্পর্কযুক্ত অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল এবং পাপ কাজ থেকে সংযত রইল, সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মত (নিষ্পাপ) হয়ে ফিরে গেল।’ ইমাম ইবন হাজার আসকালানীর মতানুসারে এখানে হজকারী ও উমরাকারী উভয় ব্যক্তিকেই বুঝানো হয়েছে। [ফাতহুল বারী : ৩/৩৮২]

৬. হজ-উমরার মাধ্যমে অভাব মোচন হয় :

আমরা না বুঝে অর্থ খরচের ভয়ে এবং মালের মুহাব্বতে আল্লাহর ঘর দেখতে বিলম্ব করি। হজ-উমরায় যেতে টাকার খরচের কথা বারবার চিন্তা করি বোকার মত। অথচ হজে শুধু পরকাল নয় ইহকালীন কল্যাণও হাসিল হয়। হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটনও দূর করে। এতদুভয়ের মাধ্যমে সম্পদ শুধু ব্যয় হয় না; বরং তা বাড়েও বটে। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ، فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ، وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ».

‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ [জামে‘ তিরমিযী : ৮১০]

৭. হজ-উমরাকারীরা খোদ আল্লাহর অতিথি :

পার্থিব জীবনে আমরা গণ্যমান্য কারো অতিথি হতে পেরে, গুরুত্বপূর্ণ কারো দাওয়াত পেয়ে নিজেকে ধন্য ও আহ্লাদিত হতে দেখি। হজ ও উমরা পালনকারীগণ সকল রাজার রাজা এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী খোদ আল্লাহর মেহমান বনে যান। তাঁরা হন মহামহিম মাবুদের অতিথি। আল্লাহর রাসূলের মুখেই শুনুন সে কথা : ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ ، وَفْدُ اللهِ ، دَعَاهُمْ ، فَأَجَابُوهُ ، وَسَأَلُوهُ ، فَأَعْطَاهُمْ».

‘আল্লাহর পথে যুদ্ধে বিজয়ী, হজকারী ও উমরাকারী আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাদেরকে আহ্বান করেছেন, তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আর তারা তাঁর কাছে চেয়েছেন ফলে তিনি তাদেরকে দিয়েছেন।’ [ইবন মাজা : ২৮৯৩; ইবন হিব্বান : ৩৪০০; মুসনাদে আহমদ : ১৪৮৯]

মেহমানের আবদার যেমন আমরা কেউ ফেলতে পারি না, আল্লাহর বান্দা যখন আল্লাহর অতিথি হয়ে তাঁর ঘর যিয়ারতে যায় আল্লাহও তখন তার কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেন না। তার কোনো কামনাই অধরা থাকে না। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ ، وَفْدُ اللهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ ، وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ».

‘হজ ও উমরা পালনকারীগণ আল্লাহর মেহমান। তারা আল্লাহকে ডাকলে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা তাঁর কাছে মাগফিরাত কামনা করলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।’ [ইবন মাজা : ২৮৮৩]

৮. এক উমরা থেকে আরেক উমরা মধ্যবর্তী গুনাহ ও পাপের কাফফারা স্বরূপ :

আমরা অনেক সময় হজ বা উমরা করে এসে দুনিয়ার পঙ্কে জড়িয়ে পড়ি। আল্লাহর ঘরের সামনে আবেগাপ্লুত হয়ে জীবনে কোনো গুনাহ না করার শপথ করে এসেও পারি না সে শপথে অবিচল থাকতে। প্রাত্যহিক জীবনের ঝুট ঝামেলার মধ্যে ডুবে কখন কোন পাপ হয়ে যায় তা যেন নিজেও টের পাই না। দয়ার জলধি মালিক তাই বারবার আমাদের সুযোগ দেন। বারংবার অবকাশ দেন নিজেকে পাপরাশির ভার থেকে মুক্ত করতে। সাহাবী আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا».

‘এক উমরা থেকে অন্য উমরা- এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তা তার জন্য কাফফারা।’ [বুখারী : ১৭৭৩; মুসলিম : ১৩৯৪]

৯. হজের নিয়তে বেরিয়ে মারা গেলে হজের ছাওয়াব হতে থাকে :

একজন মুমিন তার সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবার দ্বারপ্রান্তে গেল, হজের জন্য ঘর থেকে বের হল, আর তখনই হয়তো এসে পড়ল তার সেই অবধারিত মুহূর্ত যা খণ্ডানো বা এড়ানোর কোনো উপায় নেই। তবে মুমিনের জন্য তাতেও খুব দুঃখিত হবার কারণ নেই। দয়াময়ের দয়ায় হজ সম্পন্ন না করেও তিনি এর সওয়াব পেতে থাকবেন। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ خَرَجَ حَاجًّا فَمَاتَ كُتِبَ لَهُ أَجْرُ الْحَاجِّ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ خَرَجَ مُعْتَمِرًا فَمَاتَ كُتِبَ لَهُ أَجْرُ الْمُعْتَمِرِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ».

‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে; অতপর সে মারা গেছে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজের নেকী লেখা হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে; অতপর সে মারা গেছে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত উমরার নেকী লেখা হতে থাকবে’। [সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ১১১৪]

১০. রমযান মাসের উমরার বিশেষ মর্যাদা :

আল্লাহ তা‘আলা রমযান মাসে উমরা আদায়কে অনেক মর্যাদাশীল করেছেন। তিনি একে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজ করার সমতুল্য সওয়াবে ভূষিত করেছেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي».

‘নিশ্চয় রমযানে উমরা করা হজ করার সমতুল্য অথবা তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’ [বুখারী : ১৮৬৩; মুসলিম : ১২৫৬]

১১. হজের নিয়তে বের হবার পর থেকেই পুণ্য লেখা হতে থাকে :

বাইতুল্লাহর হজের নিয়তে বের হলে তা সম্পন্ন করার অপেক্ষা করা হয় না। ঘর থেকে বিদায় নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া থেকে তার প্রতি কদমে নেকী লেখা হয়, গুনাহ মাফ করা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। যেমন : আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 « أَمَّا خُرُوجُكَ مِنْ بَيْتِكَ تَؤُمُّ الْبَيْتَ فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ وَطْأَةٍ تَطَأُهَا رَاحِلَتُكَ يَكْتُبُ اللَّهُ لَكَ بِهَا حَسَنَةً وَيَمْحُو عَنْكَ بِهَا سَيِّئَةً ».

‘তুমি যখন বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে আপন ঘর থেকে বের হবে, তোমার বাহনের প্রত্যেকবার মাটিতে পা রাখা এবং পা তোলার বিনিময়ে তোমার জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ [তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর : ১৩৫৬৬]

তেমনি আরেক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« فَإِنَّكَ إِذَا خَرَجْتَ مِنْ بَيْتِكَ تَؤُمُّ الْبَيْتَ الْحَرَامِ ، لا تَضَعُ نَاقَتُكَ خُفًّا وَلا تَرْفَعُهُ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَكَ بِهِ حَسَنَةً ، وَحَطَّ عَنْكَ بِهِ خَطِيئَةً ، وَرَفَعَكَ دَرَجَةً».

‘কারণ যখন তুমি বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে আপন ঘর থেকে বের হবে, তোমার উটনীর প্রত্যেকবার পায়ের ক্ষুর রাখা এবং ক্ষুর তোলার সঙ্গে সঙ্গে এর দ্বারা আল্লাহ তোমার জন্য একটি করে নেকী লিখে দেন, তোমার একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।’ [সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ১১১২]

তবে অন্যসব আমলের মতো হজ-উমরার ক্ষেত্রেও দুটি কথা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। আর তা হলো, যিনি কেবল আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য আমল করবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মুতাবিক হজ-উমরা সম্পন্ন করবেন, তিনিই এসব ফযীলত অর্জন করবেন। কারণ, যে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে, যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

প্রথম শর্ত : নিয়ত শুদ্ধ হওয়া, অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ».

‘সকল কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকে তাই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।’ [বুখারী : ১; আবূ দাউদ : ২২০১] দ্বিতীয় শর্ত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া। কারণ, তিনি বলেছেন,

« مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهْوَ رَدٌّ ».

‘যে এমন আমল করল, যাতে আমাদের অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’। [মুসলিম : ১৭১৮]

অতএব, আমাদের সবার কর্তব্য হবে অনতিবিলম্বে এত সব ফযীলত লাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া। যার ওপর হজ ফরয হয়েছে তিনি কালবিলম্ব না করে এখনই হজে যাবার প্রস্তুতি নেয়া। কারণ, আমরা কেউ জানি না আমাদের মৃত্যু কখন এসে পড়ে। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আলী রাদিয়াআল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلاَ عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا وَذَلِكَ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ فِى كِتَابِهِ (وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً) ».

‘যে ব্যক্তি এতটুকু পাথেয় ও বাহনের মালিক যা তাকে আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তথাপি সে হজ করল না, তবে জানা নেই তার কী হল, সে ইহূদী হয়ে মারা গেল নাকি খ্রিস্টান হয়ে। আর তা এ কারণে যে আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন, ‘আর মানুষের জন্য ফরয হলো আল্লাহর ঘরের হজ করা যে এতে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।’ [তিরমিযী : ৮১২, আবূ ঈসা ও আলবানী হাদীসটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন।]

আর আমরা যারা হজে যাব তাদের কর্তব্য হবে, নিজের নিয়ত শুদ্ধ করে রাসূলুল্লাহ সুন্নাহ মোতাবিক হজ-উমরা করতে আলেম-উলামা ও নির্ভরযোগ্য পুস্তক-পুস্তিকার শরণাপন্ন হওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবূল হজ করার তাওফীক দিন।